শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০১:৪৩ অপরাহ্ন

ইঁদুরসহ ক্ষতিকর প্রাণী নিধনে ইসলামের নির্দেশনা

বিডি নিউজ ৭১ ডেস্কঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষতিকর ও অনিষ্টকারী হিসেবে পরিচিত ৫টি প্রাণীকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি এগুলো যদি পবিত্র নগরী মক্কার হারাম  সীমানার মধ্যেও পাওয়া যায় তা মেরে ফেলতে হবে। হাদিসে এসেছে-

– হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পাঁচ প্রকার প্রাণী বেশি অনিষ্টকারী। এদেরকে হারাম সীমানার মধ্যেও মেরে ফেলতে হবে। এগুলো হলো-

الْفَأْرَةُ، وَالْعَقْرَبُ، وَالْحُدَيَّا، وَالْغُرَابُ، وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ ‏

অর্থাৎ ইঁদুরবিচ্ছুচিলকাক এবং পাগলা কুকুর।‘ (বুখারি)

 

হজরত ইবনে জুরায়জ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি নাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মুহরিম ব্যক্তির জন্য কোন্ কোন্ প্রাণী হত্যার বৈধতা ঘোষণা করতে শুনেছেন? তখন নাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আমাকে বললেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-

এমন পাঁচ প্রকারের প্রাণী আছেকোনো ব্যক্তি তা হত্যা করলে তার কোনো গোনাহ হবে না। (আর তাহলো)- কাকচিলবিচ্ছুইঁদুর ও হিংস্র কুকুর।‘ (মুসলিম)

 

এ প্রাণীগুলোর মধ্যে ইঁদুর একটি মারাত্মক ক্ষতিকর প্রাণী। ভুক্তভোগীরাই তা জানে। আর সে কারণে ইসলাম ইঁদুরসহ ক্ষতিকর প্রাণী নিধনে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইঁদুরের ক্ষয়-ক্ষতির সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দেখলেই ইসলামি শরিয়তে কেন তা নিধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা পরিষ্কার হয়ে যায়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) এক তথ্যে লিখেছে-

ইঁদুর বছরে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান ও গমের ক্ষতি করে থাকে যার মূল্য আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করেখাবার খেয়ে ডিম ও ছোট মুরগি খেয়ে প্রতি বছর খামার প্রতি প্রায় ১৮ হাজার টাকা ক্ষতি করে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গুদামজাত শস্য ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকে। ইঁদুর মাঠের দানাজাতীয়শাকসবজিমূল জাতীয়ফল জাতীয় ফসলের ক্ষতি করে থাকে। আবার গুদামঘরে সংরক্ষিত ফসলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে (প্রায় শতকরা ২০ ভাগ)।

ইঁদুর যে শুধু ফসলেরই ক্ষতি করে তা নয়। বই খাতা, কাপড়, আসবাবপত্র, বিছানাপত্র ইত্যাদি কেটে নষ্ট করে।

কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) ওয়েব সাইট আরও এসেছে-  ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণা মতেএশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করেতা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে।

এ ছাড়া ইঁদুরসহ প্রায় ৩০ প্রকার রোগ ছড়ায়। এরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচ নালায় গর্ত করে নষ্ট করে, অনেক সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটায়। এজন্য ইঁদুরসহ সব ক্ষতিকর প্রাণীদমন করা অত্যন্ত জরুরি।

ইঁদুর সৃষ্টিগতভাবে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একটি ইঁদুর এসে চেরাগের সলতে টেনে নিয়ে যেতে যেতে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মাদুরের উপর বসে ছিলেন তাঁর উপর ঠিক তাঁর সামনে নিয়ে এসে ফেলে দেয়। এতে মাদুরের এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা পুড়ে যায়।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

‘যখন তোমরা ঘুমাবে তখন বাতি নিভিয়ে দেবে। কারণ শয়তান ইঁদুর ইত্যাদির অনুরূপ প্রাণীকে এমন কাজে প্ররোচিত করে এবং তোমাদের (ঘরবাড়িতে) আগুন লাগায়।‘ (আবু দাউদ)

ক্ষতিকর প্রাণী  নিধনে করণীয়

সুতরাং ক্ষতিকর প্রাণীসহ ইঁদুর নিধনের জন্য ফাঁদ পাতা, রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা বিষ প্রয়োগ করা, গ্যাস ট্যাবলেট- ফস টক্সিন ট্যাবলেট, অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট অথবা অন্য যে কোনো উপায় অবলম্বন করে মেরে ফেলা জায়েজ আছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা থাকা স্বত্বেও ক্ষতিকর  কোনো প্রাণীই আগুনে দ্বারা হত্যা করা ঠিক নয়। কেননা হাদিসে আগুন দ্বারা শাস্তি দেয়া মেরে ফেলায় নিষেধ রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা  মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার  সব ক্ষতিকর প্রাণী বিশেষ করে ইঁদুরের ক্ষতি থেকে  হেফাজত থাকার তাওফিক দিন। হাদিসের উপর  যথাযথ আমল করার তাওফিক দিন।  আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


© All rights reserved © 2018 bdnews71
Design & Developed by M Host BD