বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন

গভীর অন্ধকারে প্রবাসী শ্রমিকরা

বিডি নিউজ ৭১ ডেস্কঃ  

রেমিট্যান্স যোদ্ধা হলো প্রবাসী শ্রমিকরা। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তারাই। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। করোনায় সেই প্রবাসী শ্রমিকরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।  তাদের পরিবার আজ কাটাচ্ছেন চরম সংকটে। করোনার কারনে যারা দেশে ফিরতে বাধ্য হয়ছেন তারা যেমন বিপদে পড়েছেন; তেমনি যারা বিদেশে রয়ে গেছেন তারাও ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছেন। কোনো কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না কাজ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে। অথচ এদের অধিকাংশই জমি-বাড়িঘর বিক্রি করে এবং ব্যাংকে ঋণ নিয়ে বিদেশ গেছেন।

প্রবাসী শ্রমিকদের শঙ্কার কারণ জানতে চইলে জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স (UFGW) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো প্রবাসীদের আয়। করোনার প্রভাবে এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ উন্নত অনেক দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে কর্মী ছাঁটাই করছে, আবার অনেকে ছাঁটাইয়ের চিন্তাভাবনা করছে। এর ফলে অনেক প্রবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবার এখন সঙ্কট ও চিন্তার মধ্যে দিন পার করছেন। এই রেমিট্যান্স টিকিয়ে রেখে দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে সরকারকে এই করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কুটনৈতিকভাবে উদ্যোগী হয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।

শ্রমিক নেতা পলাশ আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির মূল হাতিয়ার এই প্রবাসীরা তাই সরকারের উচিত লক ডাউনে বেকার হয়ে পড়া এসকল শ্রমিকদের বিশেষ প্রনোদনার আওতায় আনা।

মদিনা প্রবাসী আবু তাহের একজন মটর মেকানিক। দীর্ঘ ২২ বছর যাবত প্রবাসে থেকে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছেন। লক ডাউনে আজ তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে সরকারকে অনুরোধ জানান তারা।

হাশমত ইসলাম ৭ বছর যাবত মালয়েশিয়ায় আছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সবকিছু পাল্টে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। প্রায় পাঁচ মাস বেকার। পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন। আইনের কঠোরতা ও নানা বিধিনিষেধের কারণে অন্য কোনো কাজও করতে পারছে না। এখন ধার-দেনা করে এখন দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। দেশে ফেরত আসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার সামনে। এরুপ পরিস্থিতিতে সরকারের নিকট বিশেষ প্রনোদনার অনুরোধ তার।

আবু তাহের কিংবা হাশমত নয়; এমন লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের আগামীর অনিশ্চয়তার কথা ভেবে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো, বিলম্বে কাজে যোগদানের জন্য ছুটি বাড়ানো ইত্যাদির উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও প্রবাসী শ্রমিকরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য এসব শুধুই কথার কথা বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান চার খুঁটির একটি হচ্ছে প্রবাসী আয়। পৃথিবীর ১৬৯টি দেশে এক কোটি ২২ লাখ প্রবাসী আছেন। গত অর্থবছরে প্রবাসী শ্রমিকরা বৈধপথেই রেকর্ড পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। হুন্ডি এবং অন্যান্য পথে পাঠানো টাকা হিসাবে আনলে এর পরিমাণ আরও ৪-৫ বিলিয়ন ডলার বেশি হয়। করোনার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর। এরই মধ্যে কুয়েত, বাহরাইন, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি কর্মী ফেরত আনার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ও খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরুণ-যুবকরা যাতে প্রবাসে থেকে কাজ করে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে সে জন্য সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। রেমিটেন্স যোদ্ধারা যাতে সে দেশে থেকে কাজ করতে পারেন সে জন্য ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করা দরকার। কাজ হারিয়ে শ্রমিকরা দেশে ফিলে আসতে বাধ্য হলে এসব মানবসম্পদ সরকারের বোঝা হয়ে দাঁড়াব।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


© All rights reserved © 2018 bdnews71
Design & Developed by M Host BD