বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
বিডি নিউজ ৭১ ডেস্ক : ছোটবেলা থেকে আমি আর ইমি একসাথে বড় হয়েছি। পাশাপাশি থাকবার সুত্রে একে ওপর কে খুব ভালোভাবেই চিনতাম ও জানতাম। কিন্তু কোনো দিন ভাবতে পারিনি যে পরবর্তিতে আমার আর ওর মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কিন্তু জানিনা হটাৎ করে কি হলো যে একে অপরের প্রেমে পরে গেলাম। বিশেষ করে আমি। কিন্তু সে এক বিশাল গল্প। বন্ধুরা তোমাদের জন্য আমি সেই গল্প তা আজ শেয়ার করছি যারা প্রেম এ প্রতারিত ও ব্যর্থ।
ইমির পরিবার ও আমার পরিবার এর মধ্যে যে একটা সুসম্পর্ক ছিল সেটা তো আগে বললাম। ওর বাবা -মা আমাকে খুব খুব ভালবাসত এবং আমাকে খুব বিশ্বাস করত। আমিও ওনাদের যথেষ্ট সম্মান করতাম। যাই হোক, সেসব বাদ দিই। আসল কথায় আসা যাক। মাধ্যমিক দেবার পর আমার আর ইমির মধ্যে বন্ধুত্বের বাধন টা যেন আরও অটুট হয়ে উঠেছিল, তবে সেটা যে খুব একটা বেশিদিন স্থায়ী হবে না তা আমি আগে বুঝে উঠতে পারিনি। ওই ৩ মাস আমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। কিন্তু অবশেষে ছুটির মেয়াদ ফুরোলো। রেজাল্ট বের হলো ইতিমধ্যেই , ওর তুলনায় আমার ফল একটু ভালো হলো। অর মা বাবা আমার ওপর আরও একটু সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। এবার ১১ এ ভর্তির পালা। ওর মা মানে কাকিমা হটাৎ বলে উঠলো ইমানুর যা নিয়ে পড়বে ইমিও সেই সাবজেক্ট নিয়ে পড়বে ,কাকিমা র কথা শুনে আমি খুব খুশি হলাম।মনের মধ্যে যেন একটা ডুগডুগি বাজতে সুরু করলো। প্রেম এ পড়লে যা হয় আরকি। তো এবার টিউসন ঠিক করার পালা। কাকিমা আবার বলে উঠলো ইমানুর যেখানে যেখানে পড়বে ইমি ও সেখানেই পড়বে । . সেই কথা মতোই আমিও একই জায়গায় আমার আর ওর স্যার ঠিক করলাম।এবার পড়াশোনা সুরু করার পালা। কিছুদিনের মধ্যে পড়া সুরু হয়ে পড়তে বেরোলে দুজনে একই সাথে বাড়ি থেকে বেরোতাম। একই সাথে সাইকেল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে অরএত কথা হত যে আমি মাঝে মাঝে ইতস্তত হয়ে যেতাম যে আর কি বলব। সেইসব দিনগুলো মনে পড়লে আজ কান্না পায়। ও একটা কথা বলতে তো ভুলে গেছি যে ইমি দারুন গান করত এবং অর অনেকগুলো গানের কাস্সেট ও বেরিয়েছে . অর আমার এই বন্ধুত্বের মধ্যে মাঝে মাঝে অভিমান ও হত। কিন্তু আবার সব ঠিক হয়ে যেত যখন আমি ওকে একটু আদর করলে ও আবার সব ভুলে যেত।কিন্তু একটা জিনিস আমি কিছুতেই পারছিলাম না বলতে যে আমি ওকে ভালবাসি।
এরমধ্যে ওই পড়ার ব্যাচ এর একটি ছেলে ওকে প্রোপস করে ফেলে। যদিও ইমি ওর ভালবাসার ডাকে সারা দেয় নি, কিন্তু ওই ছেলেটি মানে অঙ্কিত ভেবেছিল যে আমার আর ইমির মধ্যে নিশ্চয় ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে, তাই ও রাগে আমাকে মারার জন্য দুটো ছেলে পাঠালো। একদিন পরা থেকে আমি আর ইমি ফিরছি, এই রকম সময় ওই ছেলে দুটি রাস্তা আটকে আমাকে মারতে সুরু করলো, আমিও কযেকটা সজোর ঘুসি ও লাত্থী চালালাম।এরপর ছেলে দুটো পালিয়ে গেল। ইমি দেখি কাদছে। আমি ওকে বললাম বোকা কাদছিস কেন? ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো তর মুখ টা কতটা কেটে গেছে। আমি বললাম ছার বোকা কিচ্ছুই হয়নি আমার।এবার সামনে একটা মেডিসিন সপ এ গিয়ে একটু ওষুধ লাগিয়ে বাড়ি ফিরলাম। দুজনের বাড়িতে সব জানাজানি হয়ে গেল। পরদিন ইমি ও কাকিমা আমাকে দেখতে এলো আমাদের বাড়িতে। আমি তখন সুয়ে সুয়ে টিভি দেখছি। ইমি আমার পাশে এসে বসলো এবং আমার মাথায় হাত বলাতে লাগলো।তখন আমার খুব ভালো লাগছিল।এরপর ও আমাকে আশ্চর্যজনক ভাবে বলে উঠলো “তুই আমাকে ভালোবাসিস”. আমি তো ওর কথা সুনে অবাক হয়ে গেলাম। এই রকম একটা প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না ওই মুহুর্তে, যদিও আমি ওকে ভালবাসতাম। এর কিছুদিন পর আমি সুস্থ হয়ে গেলে ও আমাকে বারবার জোর করেছিল ওই উত্তর তা জানার জন্য। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম যদি আমার কথা সুনে ও আমাদের বন্ধুত্ব তা নষ্ট করে দেয়, তাই ভয়ে কথা তা বললাম না। প্রায় ২-৩ মাস হয়ে গেল, ও আমার কাছ থেকে কোনো উত্তর পেল না। কিন্তু এমন একটা সময় এলো আমিও আর ওকে উত্তর তা না জানিয়ে পারছিলাম না।একদিন পড়তে গিয়ে ওকে আমি আমার ভালবাসার কথা খুলে বললাম। ও আমার ওপর অভিমান করে ছিল তাই কোনো কথা না বলে চলে গেল আগে আগে। আমি যেরকম ওকে উত্তর তা দিতে দেরী করেছিলাম ও ঠিক তাই করতে চাইছে বোধয়। যাই হোক আমি ওকে একদিন অনেক তাল বাহানা করে অর মুখ থেকে উত্তর তা বের করলাম। দুজনের মধ্যে গড়ে উঠলো ভালবাসার সম্পর্ক। সেই দিন গুলো আমি কিছুতেই ভুলতে পারব না।
প্রথম ভালবাসা বলে কথা ! কযেক মাস ভালই কিন্তু একটা সময় দেখলাম ও আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারলাম না কারণ তা কি! বহুদিন কোনো যোগাযোগ নেই। একদিন আমিই নিজে থেকে ওকে ম্যাসেজ করে কারণ তা জানতে চাইলাম। কিন্তু বন্ধুরা যেন কি উত্তর এলো সেখান থেকে? ‘আমি নাকি ওকে খুব বেশি ভালবাসি তাই ও আর এই সম্পর্ক তা রাখতে চায় না’. আমি কি বলব আর বুঝে পেলাম না।।।।। আজ পর্যন্ত যতবার অর সাথে দেখা হয়েছে ততবার আমি ওকে বোঝাতে চেয়েছি যে আমি ওকে এখনো ভালবাসি ও সারাজীবন ভালবাসব। কিন্তু ও আজ বোঝার চেষ্টা করলনা যে আমি ওকে ভালবাসি। হয়ত এখন ও আমার থেকে ভালো কাউকে পেয়ে গেছে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে।
ও আমার কাছে ফিরে আসুক বা নাই আসুক , আমি সেই পুরনো দিন গুলো কিছুতেই ভুলতে পারব না। আজও প্রতিটা রাত আমার কান্নার রোল হয়ে থাকে ।
লিখেছেন : ইমানুর রহমান ।
আই.ই.আর বিভাগ,সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ,পাবনা।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...