বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৫ অপরাহ্ন

২১শে আগস্টের হামলায় সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঃ পলাশ

বিডি নিউজ ৭১ ডেস্কঃ

রক্তাক্ত ২১ আগস্ট। এদেশের ইতিহাসে নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৬ বছর অতিক্রান্ত। ২০০৪ সালের এইদিনে সভ্য জগতের অকল্পনীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় রাজধানীর বুকে এক রাজনৈতিক সমাবেশে। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় চালানো হয় এই  গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে কথা বলতে গিয়ে সন্ত্রাসের শিকার হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে সভাপতি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও ওই হামলায় দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান।

নিহত বীর শহীদদের স্মরণে জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রিয় নেতা আলহাজ্ব কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, ‘‘রক্তাক্ত ২১ শে আগষ্ট সকল বীর শহীদদের জানাই বিনম্র শ্রদ্বাঞ্জলী। আল্লাহর দরবারে সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।”

এছাড়াও শ্রমিকনেতা পলাশ বলেন, হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুখে দেওয়া এবং দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও হতে দেবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণ একটি আত্মমর্যাদাশীল ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবেন।

আলহাজ্ব কাউসার আহমেদ পলাশ ২১ আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে দেশের সকল নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ২১শে আগস্টের হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং তাদের মদদদাতাদের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান ঘটানোর দাবি জানান।

উল্লেখ্য, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে সেদিন শান্তি মিছিলের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলের আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনে স্থাপিত ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যপুরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে শুরু করে একের পর এক  গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।  রক্তের স্রোত বয়ে যায় রাজপথে। স্প্লি­ন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে ওঠে বঙ্গববন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা রাজপথ। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগনবিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের স্থান ছিল না। ভাগ্যগুণে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও শেখ হাসিনার দুই কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও ঘাতকরা ১২ রাউন্ড গুলি করে। তবে টার্গেট করা গুলি ভেদ করতে পারেনি তাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন সুধা সদনে। এর আগে ঘাতকদের বুলেট থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষায় বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেন হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বছর দুয়েক পরে পরাজিত হন যুবলীগ নেতা সঞ্জিব বাবুলও।

এদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানীকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। এতে নষ্ট হয় সেই রোমহর্ষক আলামত নষ্ট করা হয়। পরবর্তিতে রাষ্ট্রীয় ‍পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষমদতে ওই ঘটনা ধামাচাপা, জজমিয়া নাটক সাজিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিতসহ হেন কোনও কাজ নেই, যা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন...

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


© All rights reserved © 2018 bdnews71
Design & Developed by M Host BD